মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ১১:৪০ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্কঃ বইয়ের পাতায় বাস্তবের ছোঁয়াচ বড়ো সত্যি হয়ে উঠলে অনেক রূঢ় সত্যের সম্মুখীন হন পাঠক। মা তার সন্তানকে যুদ্ধে পাঠায়। কিন্তু সন্তান আর ফেরে না। সে মায়ের কাছে, ফেরে তার লাশ। যুগে যুগে কালে কালে বৃহতের সাধনায় জীবন উৎসর্গ করা, সন্তানহারা সব মায়েদের চোখের জল মাথায় তুলে স্বাধীন বাংলাদেশের সেই জননী জাহানারা ইমাম লেখেন ‘একাত্তরের দিনগুলি’। বলা হচ্ছে, শহীদ জননী ও কথাসাহিত্যিক জাহানারা ইমামের কথা। তার ২৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
৩১ বছর আগে মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত জননী ও সংগঠক এই মহীয়সী নারীর নেতৃত্বেই গত শতকের নব্বইয়ের দশকে গড়ে উঠেছিল মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ব্যানারে করা সেই আন্দোলনের ফসল হিসাবেই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে।
১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করলে বাংলাদেশে জনবিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের অংশ হিসেবে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করা হয়। জাহানার ইমাম হন এর আহ্বায়ক।
পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি। এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম।
১৯২৯ সালের ৩ মে ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্ম জাহানারা ইমামের। বাবার চাকরির সূত্রে নানা জায়গায় থেকেছেন। শৈশব কেটেছে রংপুরে। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বাবার সূত্রে বাড়িতে নিয়মিত আসত পত্রপত্রিকা। ক্রমে জাহানারা বইয়ের জগতে ডুবে যান। ১৯৪৮ সালের ৯ আগস্ট ময়মনসিংহে বিয়ে হয় জাহানারা ইমামের।
যখন তার বিয়ে হয়, তখন তিনি বিদ্যাময়ী স্কুলের শিক্ষক। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে এমএ পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে যোগ দেন টিচার্স ট্রেনিং কলেজে। দুই বছর সেখানে পড়ানোর পর ১৯৬৮ সালে সেই চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। ১৯৭১ সালে জাহানারা ইমাম তখন পুরোদস্তুর গৃহিণী।
মহান মুক্তিযুদ্ধে জাহানারা ইমাম তার সন্তান শাফি ইমাম রুমিকে হারান। তার লেখা দিনলিপি ‘একাত্তরের দিনগুলো’ মুক্তিযুদ্ধকালের হৃদয়গ্রাহী প্রামাণ্য দলিল হয়ে উঠেছে।
নিজের চোখের জল লিখেছেন জাহানারা ইমাম। লিখেছেন তার সবচেয়ে প্রিয় সন্তান ‘রুমি’কে কোরবানি দেওয়ার কথা। ক্ষতবিক্ষত হৃদয় নিংড়ানো এই সৃষ্টিতেই আমৃত্যু সংগ্রামী জাহানারা হয়ে উঠেছিলেন লক্ষ কোটি সন্তানের মা, ‘শহিদ জননী’।
জীবনের শেষ মুহূর্তেও তিনি বলে যান, ‘আমি আমার অঙ্গীকার রেখেছি। রাজপথ ছেড়ে যাইনি। মৃত্যুর পথে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। তাই আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই আপনারা আপনাদের অঙ্গীকার ও ওয়াদা পূরণ করবেন। আন্দোলনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে থাকবেন।’
বাঙালির কানে কানে এসে যেন তিনি আজও বলে যান, ‘কোটি কোটি মানুষ এখনও বুকে গভীর ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন। তাদের কাছে যাও, তাদের কাছ থেকে জেনে নাও মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস।’ কারণ মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার এই জীবন শৈলীতে ভালোবাসা, প্রতিবাদ, রুখে দাঁড়ানো, প্রাপ্যটুকু আদায় করার যে সম্মিলিত প্রবাহ, আজও তার নাম ‘জাহানারা ইমাম’।
এজেড এন বিডি ২৪/ রেজা
Leave a Reply