রবিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২২, ১০:০৯ অপরাহ্ন
শাহজাদা মিয়া আজাদ ,রংপুর প্রতিনিধি: বোরো ধান চাষে এক বছরে খরচ বেড়েছে কেজিতে পৌনে দু্ই টাকা, কিন্তু দাম না বাড়ায় লোকসান গুণছে কৃষক। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ফিরোজ আহমেদ বলেন, “এ বছর এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকের খচর হয়েছে ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা। এ হিসাবে ৪০ কেজি ধান উৎপাদনে খরচ পড়ে ৭৫০ টাকা।
“গত বছর কেজি প্রতি উৎপাদন খরচ পড়েছিল ১৭ টাকা।” উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদ্যুতের দাম ২১ ভাগ, ডিজেলের ৩৯ ভাগ এবং ইউরিয়া সারের দাম ৬৭ ভাগ বেড়েছে।
কৃষি শ্রমিকের মজুরি ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। সব মিলিয়ে বোরো উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৪০ ভাগ। এ বছর বোরো উৎপাদনে কৃষককে কেজি প্রতি অতিরিক্ত ১ টাকা ৭৫ পয়সা গুণতে হচ্ছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, “বোরো ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হলে কেজি প্রতি ২২-২৫ টাকা দাম নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
“এতে কৃষক বাঁচবে, কিন্তু ধানের মূল্য বাড়ালে চালের দাম বেড়ে যাবে। তখন বিপাকে পড়বে সাধারণ মানুষ।” এ বছর রংপুর জেলায় এক লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করে ছয় লাখ ২২ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোমবার পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ২০ ভাগ জমির ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি। ধান বেচে কৃষকরা জানিয়েছে তারা মণে একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা লোকসান গুণচ্ছেন। রংপুর সদরের সদ্যপুস্করণী ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামের বোরো চাষি খলিলুর রহমান। এবার তিনি ছয় একর জমিতে বোরো চাষ করেন। এক একর জমির ধান কেটে পেয়েছেন ১০০ মণ।
খলিলুর রহমান, “জমি চাষ থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত একরে খরচ হয়েছে ৭৮ হাজার টাকা। “আর ৬৫০ টাকা মণ দরে ১০০ মণ ধান বেচে ৬৫ হাজার টাকা পেয়েছি।”
এতে ১৩ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তারা। একই কাহিনি পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের বিরাহীম গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেনেরও। তিনি বলেন, “এক একর জমিতে বোরো আবাদ করি ধান পাইচি ১০৪ মণ। “৬৫০ টাকা মণ দরে বেচাইলে লোকসান হইবে ১০ হাজার ৪০০ টাকা।” সরকার ২০ টাকা কেজি দরে ৮০০ টাকায় মণ ধান কেনা শুরু করলেও স্থানীয় খাদ্য বিভাগের ক্রয়কেন্দ্রে ধান বেচতে যান না কৃষকরা।
কেন সরকারের কাছে ধান বেচতে আগ্রহী হন না জানতে চাইলে রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আজিজুল্লাহ গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান মাস্টার বলেন, “খাদ্য বিভাগ শতকরা ১৪ ভাগ শুকনা ধান কেনে।
আমরা ভেজা ধানই ৬৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছি। “এই ধান শুকিয়ে খাদ্য বিভাগে নিয়ে গেলে মণ প্রতি ৬-৭ কেজি কম হয়। যে কারণে আমরা খাদ্য বিভাগে সরকারি দামে ধান বেচতে যাই না।”
রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জামাল হোসেন কৃষক মতিয়ারের সঙ্গে একমত পোষণ করে জানান, কৃষকরা হাটেবাজারে যে ধান বিক্রি তাতের খাদ্য বিভাগের নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভেজা থাকে।
কৃষক যাতে ভালো দাম পায় সেজন্যই সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করে উল্লেখ করে তিনি জানান, খাদ্য বিভাগের নিয়ম মেনে কৃষকরা তাদের কাছে ধান বেচতে আসেন না।
এজেড এন বিডি ২৪/ রেজা
Leave a Reply