রবিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২২, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্কঃ তানভীর আহমেদ রামপুরা ব্রিজ থেকে রিকশায় ওঠেন বনশ্রীর দিকে যাবেন বলে। রাত তখন নয়টার কাছাকাছি। খালের পাশ দিয়ে রিকশা চলছে। অন্ধকার, হালকা বাতাস। বেশ লাগছিল তাঁর। হঠাৎ তাঁর মনে হলো, কোথায় যেন একটা গন্ডগোল আছে! কী যেন মিলছে না! লক্ষ করলেন, রিকশা চলছে ঠিকই, কিন্তু চালক প্যাডেল ঘোরাচ্ছেন না। দেখতে দেখতে রিকশা পেরিয়ে এল বেশ খানিকটা পথ, চালকের প্যাডেল ঘোরানোর নাম নেই। এ কী! ভুতুড়ে কাণ্ড, নাকি জাদু! রহস্যটা আরও ঘনীভূত করল একটা মৃদু গুঞ্জন। ‘গুমমম…’! রহস্য উদ্ঘাটন হলো খানিক বাদে, যখন তিনি আবিষ্কার করলেন, এই রিকশা সাধারণ রিকশা নয়। রিকশার সঙ্গে কিছু কলকবজা জুড়ে দিয়ে মোটরচালিত রিকশা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এই মোটর চলে আবার ব্যাটারিতে।
তানভীরের মতো অনেকেরই ব্যাটারিচালিত রিকশার সঙ্গে প্রথম পরিচয়টা অবাক করা। প্রথমবার প্রত্যেকেই বোধ হয় খানিকটা উঁকিঝুঁকি মেরে কারসাজিটা বুঝতে চেষ্টা করেছেন। তারপর নিশ্চয় রিকশাচালকের একটা ছোটখাটো ‘ইন্টারভিউ’ নিয়ে ফেলেছেন! ‘মামা, এই রিকশা কীভাবে চলে? ব্যাটারি কই? একবার চার্জ দিলে কতক্ষণ চলে?’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রথম দিকে নগরবাসী কিছুটা বিস্মিত হলেও, এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা চোখে পড়ে হরহামেশা। সাধারণত, এ ধরনের রিকশায় বসার জায়গা কিছুটা প্রশস্ত হয় বলে যাত্রীরাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। রিকশার সিটের নিচে ব্যাটারি রাখা হয়। তাই কিছুটা বাড়তি জায়গা পাওয়া যায়। উত্তরার জসীমউদ্দীন রোডে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, অধিকাংশ রিকশাই ব্যাটরিচালিত। কথা হলো এই রিকশার একজন চালক, মোহাম্মদ ওসমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাগো কষ্ট কম হয়। কিন্তু জমা দিতে হয় বেশি। রাস্তায় নষ্ট হয়া গেলেও বিপদ। তখন রিকশা টানতে কষ্ট হয়। ব্যাটারির তো একটা ওজন আছে।’ এদিকে সাধারণ রিকশার চালক নুর ইসলামের কথায় মনে হলো, ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকদের তিনি ‘শত্রুশিবিরের লোক’ মনে করেন! তিনি বলেন, ‘হ্যারা তো একটা মোটর লাগায়া নিজেগোরে সিএনজি ড্রাইভার মনে করে। জমা বেশি, ভাড়াও লয় বেশি। এত ট্যাকা জমা দিয়া ভাই পোষায় না। আর চুরি হইলে তো খবরই আছে! এর থেইকা আমার রিকশাই ভালো।’
ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই নতুন যান ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে। এই গতি আবার কারও কারও জন্য দুর্গতি বয়ে আনে, জানা গেল ধানমন্ডির তন্ময় সাহার সঙ্গে কথা বলে। তিনি বলেন, ‘সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সমাবর্তন অনুষ্ঠান ছিল। সাতসকালে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাটারিচালিত রিকশায় উঠেছি। খালি রাস্তায় রিকশাটাও ছুটছিল মোটরসাইকেলের মতো। কোথা থেকে এক লোক সামনে এসে পড়ল। রিকশাওয়ালাও তাল সামলাতে পারেননি। মাঝরাস্তায় একেবারে চিতপটাং হয়ে গেলাম। ভাগ্যিস, অল্পের ওপর দিয়ে গেছে। হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে সমাবর্তনে গিয়েছি, সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা!’ এই রিকশার চালকদের জন্য একটা সাবধানবাণী পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করলেন তন্ময়, ‘মোটর আছে বলে নিজের রিকশাটাকে “উড়ুক্কুযান” ভাববেন না!’ বোঝা গেল, হালকা-পাতলা যানবাহনটা নিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বেগে ছোটার চেষ্টাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
এজেড এন বিডি ২৪/ রেজা
Leave a Reply