শনিবার, ২১ মে ২০২২, ১২:১০ অপরাহ্ন
লাইফস্টাইল ডেস্কঃ শতবর্ষী সাতটি গাছ। প্রতিটিই রেইনট্রি। একেক গাছের ডালপালা প্রায় ৪০ ফুট প্রসারিত। এসব গাছের ছায়া সুশীতল করে রেখেছে এলাকাটি। সুনসান এ এলাকাজুড়ে অসংখ্য গাছ বিছিয়ে রেখেছে সবুজের শামিয়ানা। গাছের এমন সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে চান ? চট্টলার সমৃদ্ধ অতীত জেনে তৃপ্তি পেতে চান ? এখনই চলে আসুন সিআরবিতে!
প্রিয় পাঠক, আজ আপনাকে আমার সঙ্গে সিআরবিতে ঘুরে বেড়াবার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সিআরবিতেই ঘুরে বেড়াব আমরা। নগরের স্টেডিয়ামের নেভাল এভিনিউ কর্নার দিয়ে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু হবে আমাদের । সড়কের দু’পাশের উঁচু পাহাড়, আর পাহাড়ে শতবর্ষী গাছের সারি। এসব দেখে মনে পড়তে পারে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ‘নিমন্ত্রণ’ কবিতটি ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়….।’ আরেকটু এগুলেই বাম পাশে রেলওয়ে হাসপাতাল, যা ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ডানে সিআরবি ভবনে যাওয়ার সিঁড়ি। তবে ভবনে যাওয়ার প্রধান ফটক চোখে পড়বে আর কিছুদূর হাটার পর। নতুন প্রজন্মকে রেলের ইতিহাস জানাতে গটের সামনেই রাখা হয়েছে শতবছরের স্মৃতিবাহী কয়লাচালিত বিশাল একটি ইঞ্জিন, ইঞ্জিনের পাশে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে প্রকৃতির সবুজ শামিয়ানা টাঙানো বিশাল চত্বর।
শতবর্ষী সাতটি গাছ যেন এখানে ধরে রয়েছে হাতে হাত। সাত রাস্তার মোড়ে থাকা এসবগাছের ছায়ায় তাপদাহে যেমন অতিষ্ঠ মানুষ খুঁজে পায় স্বস্তি, তেমনি নগর জীবনের কোলাহল থেকেও মানুষ পায় মুক্তি। নীল আকাশ ও সবুজ একাকার হয়েছে এই জায়গায়। সুশীতল, সুনসান এ এলাকাটি দেখতে অপূর্ব! শাল, সেগুন ও গর্জনসহ নানা গাছের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে আসেন প্রতিনিয়ত।
এরই মধ্যে পশ্চিম-উত্তর দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো টিলার উপর টকটকে লাল রঙের একটি ভবন। চোখ জুড়ানো ওই ভবনটি যে কাউকেই কাছে টেনে নেবে! ভবনটির নাম সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি)। ১৮৭২ সালে এই ভবন নির্মিত হয়। অনিন্দ্যসুন্দর ভবনটি বন্দর নগরীর প্রাচীনতম ভবন। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয় এখানে। ভবনের সামনে আছে বাঁধানো একটি খোলা চত্বর। চত্বরে আছে কাঠবাদাম, লিচুসহ আরো অনেক গাছ। টিলার ঢালে দেবদারু ও সেগুন গাছও আছে।
রাজকীয় ভবনটিতে ঢুকতে গিয়ে প্রথমে হয়তো থমকাবেন। মনে হবে, রাজবাড়িতে ঢুকছেন। ভবনটির একপাশ দোতলা সমান উঁচু, অন্য দিকটা চারতলা।বিল্ডিংটি কয়েকটি ব্লকে বিভক্ত। এতে রয়েছে অনেকগুলো কক্ষ, হলঘর, প্যাঁচানো সিঁড়ি, গম্বুজ,গাড়িবারান্দা এবং চারদিকে বিশাল করিডর। রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের দপ্তর রয়েছে এখানে। আরো আছে সোনালী ব্যাংকের কার্যালয় এবং একটি পোস্ট অফিস। পুরনো ভবনের দক্ষিণ ব্লকের কেন্দ্রে দুটি গথিক খিলানবিশিষ্ট একটি দ্বিতল গাড়িবারান্দা আছে।ভেতরে একটি হলঘর আছে, যার শীর্ষে আছে গোলাকার গম্বুজ। ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটি টাওয়ার আছে। রয়েছে একটি প্যাঁচানো সিঁড়ি। সিঁড়ির ওপর মোগল স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত আছে একটি ছোট গম্বুজ।
এবার ইতিহাস ঘেঁটে কিছু তথ্য দিচ্ছি আপনাদের। ভবিষ্যত প্রজন্মেও কাছে রেলের ইতিহাস জানার পা-িত্য দেখাতে এই তথ্য গুলো কাজে লাগবে আপনার । ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চল শাসন করেছিল ব্রিটিশরা। তখন প্রশাসনিক প্রয়োজনে যে ভবনগুলো তারা তৈরি করেছিল, সিআরবি তার একটি। তবে পাওয়া তথ্যমতে, পুরো ভবন একবারে নির্মিত হয়নি। ২০ একর জায়গা নিয়ে সিআরবি ভবন এলাকা। প্রায় চার লাখ বর্গফুট ভবনটির আয়তন। ১৮৯৭-১৯৭২ সালের মধ্যে কয়েক দফায় এটির সংস্কার-মেরামত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১৯৭২ সালে শেষ সংস্কার হয়। রেলওয়েকে দুটি জোনে ভাগ করার পূর্ব পর্যন্ত এই ভবনটিই ছিল সমগ্র বাংলাদেশের রেলওয়ের সদর দপ্তর।
সিআরবির আশপাশে রয়েছে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বাংলো, রেস্ট হাউস ও কর্মচারীদের আবাসস্থল। কাছের একটি পাহাড়ের নিচে আছে একটি শিরীষগাছ। গাছের বেদি বাঁধানো। বেদিতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়। তখন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা প্রতিযোগিতাও হয়।
এজেড এন বিডি ২৪/ তন্নি
Leave a Reply